বাংলায় ৫টি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল; দৌড়ে কে এগিয়ে?

8 minute
Read



Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

সন্ধ্যে মানে শাঁখের শব্দ, সন্ধ্যে মানে গরম চা আর মুড়িমাখা আর সন্ধ্যে মানেই রিমোটের বাটনে অব্যর্থ লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া জি বাংলা, স্টার জলসা বা কালার্স বাংলার মতন কিছু চ্যানেলে। এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে  খুব বেশি দ্বিমত হয় না। কারন পশ্চিমবঙ্গের মোটামুটি প্রত্যেকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছে এখন মিঠাই, সর্বজয়া, যমুনারা..

বাংলা সিরিয়াল তুমুল জনপ্রিয়তা পায় আশি-নব্বইয়ের দশক থেকে। 'তেরো পার্বন' দিয়ে বাঙালির বাংলা সিরিয়াল দেখার অভ্যাস শুরু হয়। তারপর 'মহাপ্রভু', 'জন্মভূমি', 'এক আকাশের নিচে' প্রভৃতি টিভি সিরিয়াল দর্শকের মনে আজও গেঁথে আছে। বর্তমানে জনপ্রিয় বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁদের কেরিয়ার শুরু করেন এই সমস্ত সিরিয়ালগুলির মাধ্যমেই। আগে শুধুমাত্র দূরদর্শন চ্যানেলই ছিল মানুষের ভরসা কিন্তু এখন বিভিন্ন চ্যানেলে একই সময়ে চলে আলাদা আলাদা সিরিয়াল। আর তার সাথে চলে টিআরপি র ঠান্ডা লড়াই। 

আচ্ছা বর্তমানে সেরা যে পাঁচটি সিরিয়াল মানুষ পছন্দ করেন তাদের নামগুলির মধ্যে এক আশ্চর্য্য মিল খেয়াল করেছেন কি? প্রায় প্রতিটি সিরিয়ালের নামেই কিন্তু রয়েছেন একজন করে নারী। আসুন দেখে নিই কোন পাঁচটি সিরিয়াল বর্তমানে সেরার তালিকায় রয়েছে।

 

মিঠাই


 ২০২১ এর প্রথমে এই সিরিয়াল শুরু হলেও বর্তমানে জনপ্রিয়তার নিরিখে সবার আগে রয়েছে মিঠাই। গল্পের নায়িকা মিঠাই। সে গ্রামের মেয়ে। বানাতে পারে নানান রকমের মিষ্টি। আরেক দিকে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় মিষ্টি ব্যবসায়ী মোদক পরিবার, যারা পঞ্চাশ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন। এই মোদক বাড়ির ছেলে সিদ্ধার্থ বা সিড, যে হল মিঠাইয়ের উচ্ছেবাবু। মিষ্টি খেতে একদমই পছন্দ করে না সে। বাড়ির মধ্যে সবথেকে ইন্ট্রোভার্ট চরিত্রটিও তার। মিঠাই কি পারবে তার উচ্ছেবাবুর খাবার থালায় এবং জীবনে মিষ্টি ফিরিয়ে আনতে? মিঠাই আর সিডের বিবাহ পরবর্তী জীবন, রোম্যান্স আর তাদের পরিবারের মিষ্টি গল্প নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যে ৮টায় জি বাংলায় হাজির হয় মিঠাই। গল্পে মিঠাইয়ের চরিত্রে সৌমিতৃষা কুন্ডু এবং সিডের ভূমিকায় আদৃত রায় দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।

 

যমুনা ঢাকি


তুমুল জনপ্রিয়তার সাথে সম্প্রতি ৫০০ এপিসোড শেষ করল এই সিরিয়াল। প্রথম পর্যায়ের লকডাউনের সময় শুরু হয় এই সিরিয়াল। সিরিয়ালের গল্পটি হল নারীকেন্দ্রিক। যমুনা ঢাকি হল একজন মহিলা ঢাকি। সে কিভাবে এই পুরুষ শাসিত সমাজে নিজের নাম সুপ্রতিষ্ঠিত করবে সেটাই হল মূল গল্প। তাছাড়া এক সুন্দর পারিবারিক বন্ধনের কথাও বলা হয় এই সিরিয়ালে। যমুনা ঢাকির চরিত্রে শ্বেতা ভট্টাচার্য্য এবং তার স্বামীর চরিত্রে রুবেল দাসের অভিনয় প্রশংসনীয়। বর্তমানে চিত্রনাট্য অনুযায়ী যমুনা মৃতা। জ্যোতি সেন নামে ছদ্মবেশে সে উপস্থিত হয়েছে তার খুনিকে ধরার জন্য। জ্যোতি সেন যমুনার মত শান্ত নয়। সে আধুনিকা এবং সাজসজ্জায় উগ্র। যদিও অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্যের কাছে যমুনাই অনেক বেশি কাছের চরিত্র। এই সিরিয়ালের মাধ্যমে যদি ঢাকি সম্প্রদায়ের মানুষদের কিছু সাহায্য বা উন্নতি হয় তার আশাই করছেন পরিচালক থেকে কলাকুশলীরা। প্রতিদিন সন্ধ্যে ৭.৩০টায় জি বাংলাতে হয় যমুনা ঢাকি।

 

খুকুমণি হোম ডেলিভারি


বাস্তব জীবনের গল্প বলা এই সিরিয়ালটি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। ১লা নভেম্বর থেকে শুরু এই সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র খুকুমণি। যার আছে খাবারের হোম ডেলিভারির বিজনেস। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই কৌটো ভরে সুস্বাদু খাবার পৌঁছে দেয় সে বাড়ি বাড়ি। রান্না করাই তার নেশা ও পেশা। এই খুকুমণির ওপর দায়িত্ব আসে এক বদমেজাজি এবং অন্যরকম মনের এমন একজনকে খাবার খাওয়ানোর যাকে খাওয়াতে পারলে তাকে তিনগুণ বেশি অর্থ দেওয়া হবে। সে হল খুকুমণির 'রাজপুত্তুর' বিহান। সিরিয়ালে খুকুমণির চরিত্রে দীপান্বিতা রক্ষিত এবং বিহানের চরিত্রে রাহুল মজুমদার মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। এই নতুন সিরিয়ালটির আরো সাফল্য কামনা করি। স্টার জলসাতে সোম থেকে শুক্র সন্ধ্যে ৬.৩০টায় এটি দেখা যায়।

 

সর্বজয়া


এই ধারাবাহিকের এক এবং একমাত্র ইউএসপি হলেন দীর্ঘ দিন পর ইন্ডাস্ট্রিতে কামব্যাক করা দেবশ্রী রায়। তিনিই সর্বজয়া এবং সবাইকে যে তিনি জয় করে নিয়েছেন সেটা এই সিরিয়ালের টিআরপি থেকে স্পষ্ট। গল্পে দেখা যায় এক ধনী বাড়ির সুগৃহিনী সর্বজয়া। বাড়ি এবং পরিবারের প্রতিটি মানুষের খেয়াল রাখতে গিয়ে আধুনিক আদব-কায়দায় সে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। তাই জা তাকে 'ব্যাকডেটেড' ভাবে। গল্প যত এগোচ্ছে আস্তে আস্তে সর্বজয়া শিখছে মডার্ন রীতি-নীতি। শুরুতে প্রত্যেকের মনে হয়েছিল হয়ত 'শ্রীময়ী'র মতই এগোবে গল্প। তবে প্রথমেই তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে কারন সর্বজয়ার স্বামী দীর্ঘ বিবাহিত জীবন কাটানোর পরেও তাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, সাপোর্ট করেন। স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা কুশল চক্রবর্তী। আর হ্যাঁ, অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের নাচ এই সিরিয়ালের অন্যতম আকর্ষণ। সোম থেকে শনি জি বাংলায় রাত ৯টায় সম্প্রচার হয় সর্বজয়া।

 

ধুলোকণা


'নীড় ভাঙ্গা ঝড়' সিরিয়াল দিয়ে যার টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং 'বৌ কথা কও' এর মত জনপ্রিয় সিরিয়ালের নায়িকা মানালি মনীষা দে হলেন এই ধুলোকণা সিরিয়ালের দুটি মুখ্য চরিত্রের একজন। আর অন্যজন হলেন ইন্দ্রাশীষ রায়। সিরিয়ালে এদের দুই চরিত্রের নাম যথাক্রমে ফুলঝুড়ি ও লালন। দুজনের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক দিয়ে গল্পের সূচনা হয়। এক যৌথ মধ্যবিত্ত পরিবার শখের বশে একটি গাড়ি কিনে ফেলেন কিন্তু সেই গাড়িকে রাখার জন্য কোনও গ্যারেজ নেই তাই বারান্দায় মশারি টাঙিয়ে গাড়ি রাখার ব্যাবস্থা করা হয়। সেই গাড়ির ড্রাইভারের কাজে যোগ দেয় লালন যে আদতে একজন গায়ক। তার সাথে বাড়ির কেয়ারটেকার ফুলঝুড়ির শুরু হয় দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া। এ বছরের ১৯শে জুলাই টেলিকাস্ট হওয়ার পর থেকেই এভাবে এগিয়ে চলেছে গল্প। স্টার জলসায় প্রতিদিন সন্ধ্যে ৮টায় শুরু হয় এই সিরিয়াল। টিআরপি বলছে এটি লম্বা রেসের ঘোড়া।

এই টিআরপি, কম্পিটিশন এসব সাধারণ দর্শক বোঝেন না সেভাবে। তাঁরা জানেন সন্ধ্যে হলেই প্রিয় চ্যানেল খুলে দেখতে হবে প্রিয় মানুষদের জীবনে এরপর কি ঘটবে তার গল্প। তাদের কষ্টে অনেকে কাঁদেন আবার খুশি উপচে পড়ে চোখে মুখে যদি টিভির ওপারের মানুষগুলোর জীবনে আনন্দের ঘটনা কিছু ঘটে থাকে। বাস্তবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম যাই হোক না কেন, তাঁরা আমাদের কাছে পরিচিত তাঁদের পর্দার নামেই। এখানেই তাঁদের অভিনয়ের সার্থকতা। দর্শক হিসেবে চাইবো বাংলা ধারাবাহিকে আরো বাস্তবধর্মী অথবা সাহিত্যনির্ভর গল্প আসুক। বাংলা ধারাবাহিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দী এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও তৈরি হতে থাকুক আরো অনেক অনেক ধারাবাহিক।

Logged in user's profile picture