বাংলার ঐতিহ্য - বিষ্ণুপুর মেলা

6 minute
Read



Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

বিষ্ণুপুর বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইতিহাস। টেরাকোটার কারুকার্য খচিত প্রাচীন স্থাপত্য, রাসমঞ্চ, রাধামাধব মন্দির, জোড়বাংলা, অপূর্ব পোড়ামাটির ঘোড়া। ভেসে ওঠে বাংলার এক গৌরবময় যুগের চিত্র। ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীতের সঙ্গে গৌড়ীয় নৃত্যের মেলবন্ধন।


তার সাথে সাথে বিষ্ণুপুরে রয়েছে এক ঐতিহ্যশালী সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। রয়েছে বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত যার ধারক ছিলেন যদুভট্ট থেকে মান্না দে। এ হেন বিষ্ণুপুর হল পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলার এক গর্বের স্থান৷ সেখানে এখনও প্রতি বছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় 'বিষ্ণুপুর মেলা'

এই বিষ্ণুপুর মেলা বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য। ৩২ বছর ধরে চলা এই মেলা দেখতে দূর থেকে বহু মানুষ এসে জড়ো হন এখানে৷ সকাল ন'টা থেকে রাত বারোটা অব্দি মেলাপ্রাঙ্গণ খোলা থাকে। প্রচুর দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে চারপাশে। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত পোড়ামাটির জিনিস থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিভিন্ন দোকান থাকে এখানে। তার সাথে সাথে প্রচুর খাবারের স্টল যেখানে ফুচকা, আলুকাবলি থেকে এগরোল, চাউমিন সবরকম খাবার পাওয়া যায়। সন্ধ্যের পর থেকে বাড়তে থাকে ভিড়। মেলায় আসা নাগরদোলার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়ায় ছোটরা। তাদের হাসির শব্দে প্রাণ আসে যেন মেলায়। তার সাথে সাথে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিখ্যাত সব শিল্পীরা প্রতি বছর বিষ্ণুপুর মেলায় অনুষ্ঠান করতে আসেন। তাঁদের মধ্যে থাকেন সঙ্গীতশিল্পী, বাচিকশিল্পী, অভিনেতা ইত্যাদি।

এ বছরের মেলার থিম হল 'পর্যটন ও হস্তশিল্প'। আগামী ২৩শে ডিসেম্বর থেকে ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই মেলা চলবে৷ এমনিতেও বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হয়েছিল বিষ্ণুপুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র এটি। প্রায় ১৪০০ বছরের ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই এলাকার বুকে। সারা বছর ধরে বহু মানুষ আসেন এখানে সেই ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে৷ শুধু তাই নয় বিষ্ণুপুরের খুব কাছেই রয়েছে বাংলার আর এক দর্শনীয় স্থান কামারপুকুর, আর তার থেকে কিছুটা গেলেই জয়রামবাটি। কামারপুকুর আসতে গেলে পেরোতে হয় বিখ্যাত জয়পুরের জঙ্গল যা বিষ্ণুপুর আসার আরেক আকর্ষণ। ভাগ্য ভালো থাকলে হাতির দেখাও মেলে এই জঙ্গলে। 


কলকাতা থেকে এত কাছে রয়েছে এই এলাকা তবু সেভাবে পর্যটকরা আসেন না এখানে, এটি লক্ষ্য করেই স্থানীয় প্রশাসন বিষ্ণুপুর মেলার সিদ্ধান্ত নেন৷ প্রথমে এই মেলা বসতো ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে রাজদরবারে। তারপর হাইস্কুলের মাঠে এবং বর্তমানে নন্দলাল মন্দিরের কাছে এটি বসে। পোড়ামাটি এবং টেরাকোটার কাজের মতই এখানকার আরেকটি বিখ্যাত শিল্প হল বালুচরী শাড়ি। বাংলার নিজস্ব এই সিল্ক ইন্টারন্যাশনাল স্টেজেও খ্যাতি অর্জন করেছে যার পিছনে রয়েছেন এই অঞ্চলেরই মানুষ। সেই বালুচরী শাড়ি হল এই মেলার আরেক আকর্ষণ। স্থানীয়দের তৈরি এই শাড়ি মেলা থেকে কিনলে তাদেরও লাভ হবে আর আপনিও খাঁটি জিনিসটি বেছে নিতে পারবেন তাই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এবার আসি বিষ্ণুপুর উৎসবের কথায়। যে কদিন মেলা চলে প্রতিদিনই এখানে বিখ্যাত মানুষরা পারফর্ম করে যান। এইবারের উৎসবে থাকছেন অনুপম রায়, লোপামুদ্রা মিত্র, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষজন। শুধু তাই নয় তাঁদের সাথে থাকেন স্থানীয় শিল্পীরাও যারা বাউল গান, চরক, সাঁওতাল নাচ ইত্যাদির মাধ্যমে জমিয়ে তোলেন মেলাপ্রাঙ্গন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শীতের রোদে টেরাকোটার প্রাচীন মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে বাউল গান শোনার সুখ যে কী তা একবার যিনি শুনেছেন তিনিই জানেন! অথবা যে রাসমঞ্চের প্রতিটি দেওয়ালে এখনও কান পাতলে শোনা যায় ঠুমরীর বোল সেখানে আধুনিক বাংলা গানের নরম সুর ছড়িয়ে পড়ে যখন, ইতিহাস আর বর্তমান মিলেমিশে যায় সেই মুহূর্তে। চরকের প্রাচীনতার সাথে ব্রেক ডান্সের আধুনিকতা পাশাপাশি দাঁড়ায় এক মঞ্চে। মেলা শব্দটির মধ্যেই রয়েছে এক মেলানোর কথা, বিষ্ণুপুর মেলায় এই মিলনই হল প্রধান থিম। 


তাই ঘুরে আসুন টুক করে এই শীতে বিষ্ণুপুর ২৩-২৭শে ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনও দিনে। ইতিহাসকে ছুঁয়ে বাংলার হস্তশিল্পের রঙীন কারুকাজ নিয়ে আসুন নিজের সাথে৷ এই বছরটি শেষ হোক একদম অন্যরকম এক উৎসবের মধ্যে দিয়ে..


Logged in user's profile picture