নববর্ষ - বাঙালির বর্ষবরণ

6 minute
Read



Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

নববর্ষ মানে হালখাতা, মিষ্টির প্যাকেট, বাংলা ক্যালেন্ডার। নববর্ষ মানে নতুন জামা, দোকানে দোকানে ঘুরে ঠান্ডা শরবত খাওয়া। নববর্ষ মানে ছুটির দিন, খুশির দিন..

আমরা জানুয়ারির এক তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন বলে সেলিব্রেট করি, আতসবাজি পোড়াই, সবাইকে বলি "হ্যাপি নিউ ইয়ার"। কিন্তু বাঙালিদের কাছে নতুন করে আবার নতুন বছরের আনন্দ ফিরে আসে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিতে। সেদিন বাংলার "নববর্ষ"! বৈশাখ থেকে যে বছরের শুরু আর চৈত্র মাসে বছরের শেষ। 

ঠিক কবে থেকে এই নববর্ষ বাংলায় প্রচলিত তা নিয়ে অনেক মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন মুঘল বাদশা আকবরের সময় থেকে এর প্রচলন আবার কারুর মতে এই উৎসব আরো প্রাচীন। মোটকথা চাষের প্রথম সূচনার সময় থেকেই আনন্দ করে এই উৎসব পালন করা শুরু হয়েছিল। সবাই প্রার্থনা করত যেন এরপর থেকে সারা বছর যেন ফলন ভালো হয়। আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিনির্ভর তাই অনেক উৎসবের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে এই চাষবাস, ভালো ফসল ফলানোর জন্য প্রার্থনা।

আগেকার দিনে নববর্ষ পালনের কথা অনেক গল্পে, লেখাতে পাওয়া যায়। শোনা যায়, চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে ঢেঁকিতে চাল কোটা হত। অনেক রকমের নাড়ু, মিষ্টি বানানো হত। নববর্ষের দিন যারা বাড়িতে আসত তাদের খেতে দেওয়া হত সেসব। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই উৎসব মানা হত। তারপর যুগ যত এগোতে থাকল বাড়ি বাড়ি এই আয়োজন বন্ধ হয়ে শুধুমাত্র দোকানে পালন হওয়া শুরু হল। আশি-নব্বই দশকে যাদের ছোটবেলা কেটেছে তাঁরা ভালো মতই মনে করতে পারবে সেই দিনটার জন্য প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করার কথা! বাড়ির বড়দের সঙ্গে বিকেলবেলা নতুন জামা পরে বেড়োনো, কতগুলো দোকানে ঘোরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কোল্ড ড্রিংকস খেতে দিত। সে সময় তা ছিল সোনার মতই দামী। সারা বিকেল ঘুরে সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফেরা হত। তারপর একের পর এক মিষ্টির প্যাকেট খুলে সাজিয়ে রাখা হত থালায়। বেশ কয়েকটা ক্যালেন্ডারও পাওয়া যেত। যাদের বেশির ভাগেই ছবি থাকত মা কালী নাহলে লক্ষ্মী-গণেশের!

তখন নতুন জামা কাপড় হত বছরে দু'বার- নববর্ষ আর পুজোতে। এখন Myntra, Ajio র যুগে বসে কথাটা ভেবেও অবাক লাগে! প্রশ্ন উঠতে পারে এখন কি নববর্ষ হারিয়ে গেছে? উত্তরে বলা যায়, আগেকার মত সেই সাদামাটা সুন্দর নববর্ষ পালন আর নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেও তার রূপ বদলেছে। তবে হারিয়ে যায় নি একদমই। এখন আধুনিক বাঙালি নববর্ষ সেলিব্রেট করে রেস্টুরেন্ট, রুফ টপ ক্যাফে বা শপিং মলেতে। আসুন দেখে নিই কেমন হয় আধুনিক নববর্ষ উদযাপন..

নববর্ষে কেনাকাটা

নতুন বছর পড়ে যাবে আর বাঙালি চৈত্র সেলে কেনাকাটা করবে না এ হয় নাকি? সুতরাং বনেদী কাপড়ের দোকান হোক বা শহরের নামী দামী শপিং মল সর্বত্র শুরু হয় নববর্ষ স্পেশাল সেল। মলগুলি সেজে ওঠে ডাব, কলাপাতা বা কদম ফুলের মালায়, বাজতে থাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত। নববর্ষে বাঙালির আবেগকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় যাতে আপনার প্রয়োজন না থাকলেও দু-একটা নরম হ্যান্ডলুম কিনে ফেলেন নববর্ষে সাজবেন বলে! 

নববর্ষের খাওয়া দাওয়া

সাজগোজ তো হল এবার বাঙালির সবথেকে প্রিয় কাজটির কথা বলে নিই যা ছাড়া বাঙালির কোনও উৎসবই পূর্ণ হয় না। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া! নববর্ষের দিন নো চাইনিজ, নো মোঘলাই। বাঙালি ফিরে পেতে চায় তার চিরন্তন স্বাদকে। কাঁসার থালায় সাজিয়ে আসবে বাটিচাপা সুগন্ধী চালের ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, ঘি ঢালা শুক্তো, তিন-চার রকম মাছ, মাটন কষা, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, শেষ পাতে লাল দই, মিষ্টি আর মিঠাপাতি পান। কি জিভে জল আসছে তো ভেবেই? এক্ষুনি টেবিল বুক করে ফেলুন তাহলে বাঙালি রেস্টুরেন্টগুলোয়। কারন নববর্ষের দিন স্পেশাল ভাবে সেজে ওঠে তাদের মেনুকার্ড। যেখানে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কে আমপোড়ার শরবত অব্দি আপনার জন্য হাজির হবে। নববর্ষ জমে ক্ষীর! 

নববর্ষ স্পেশাল ক্যাফে

ওপরের খাবারের তালিকা শুনে যারা এখনই ক্যালোরি হিসেব করে ভাবছেন আপনাদের জন্য হাল্কা স্ন্যাক্স আর ড্রিঙ্কের ক্যাফেই একদম পারফেক্ট। তাদের জন্যও রয়েছে দারুন খবর।

এই দিনটিতে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাফেতে ককটেল বা মকটেলের লিস্টে স্পেশাল ভাবে যুক্ত হয় বাঙালিয়ানা। বেলের শরবত, ডাবের শরবত, আমপোড়ার শরবত এইসব..

নববর্ষ নিয়ে বাঙালির আবেগ কোনদিন শেষ হওয়ার নয়। ১লা জানুয়ারি তুমুল আনন্দ করা মেয়েটি ঠিক ১লা বৈশাখের দিন শাড়ি পরে সেলফি তুলবেই নিজের। এভাবেই বেঁচে থাকবে বাংলার উৎসব। আমরা পুরনো দিনের স্মৃতি বুকে নিয়ে এগিয়ে যাব নতুন বছরের দিকে প্রতিবার..

Logged in user's profile picture