লিঙ্গ বৈষম্য এবং সাইবার নিরাপত্তা
9 minuteRead
(You can read this Blog in English here)
পিতৃতন্ত্র
আমাদের সমাজের পরিকাঠামোর মধ্যে এমনভাবে পিতৃতন্ত্র ঢুকে গিয়েছে যে আমরা তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ পাচ্ছি। একজন নারী হয়ে আমি এই পিতৃতন্ত্রের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি। ছোট থেকে বড় সমস্ত পরিস্থিতিতে আমাদেরকে এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এটি এমন একটি সামাজিক পরিকাঠামো যেখানে একটি নয় একাধিক দেওয়ালে ঘিরে রাখা, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বাঁধা তৈরি করছে অনবরত। নারীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুরুষ জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে এসেছে। যা একটি লিঙ্গ বৈষম্যে পরিণত হয়েছে, জীবনের প্রতি পদে পদে তা প্রমাণিত।
পিতৃতন্ত্রের সমান অধিকার পাওয়ার জন্য নারী অধিকারের সচেতনতার বার্তা, বিপ্লব অনিবার্য। শুধুমাত্র লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে আজও নারীরা অনেক সুযোগ এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত। কয়েক দশক ধরে পিতৃতন্ত্র কিভাবে নারীর অধিকার দমিয়ে রেখেছে সে ব্যাপারে আমি কিছুটা আভাস দিতে চাই। এই পিতৃতন্ত্রের প্রভাব বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে মহিলারাই। একজন ভারতীয় হোক বা আমেরিকান নারী, গৃহকর্তৃ হোক বা কর্মরত মহিলা, সমস্ত ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। আমাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পেশাগত জীবনের সঙ্গে যুক্ত নারীরা বছরের পর বছর পিতৃতন্ত্র সমাজের শিকার, পুরুষের সমান অধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছেন। কেবল লিঙ্গ ভিত্তিক সমাজের কারণেই কর্মসংস্থানে, মালিকানা স্বত্বে, বেতনে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আর এই বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরী।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা হল সাইবার নিরাপত্তা, যা লিঙ্গ ভেদে এই পেশার অধিকারী হওয়া সম্ভব।
এই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক পেশায় অথবা কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত মহিলা কর্মী নেই। একটি সমীক্ষায় থেকে জানা গিয়েছে, 2011 সালে মাত্র 11% মহিলা ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি স্পেস বা ICS পদে নিযুক্ত ছিলেন। যদিও এই বড় পদে মহিলাদের নিযুক্ত না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার বেশিরভাগই কারণ, না-পসন্দ এই পেশা।
সাইবার নিরাপত্তায় লিঙ্গ বৈষম্য থাকার কারণ বুঝতে হলে, আমাদের লিঙ্গভেদে সমান অধিকারের গুরুত্ব জানা প্রয়োজন।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে কাজ করা, যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দ্বিতীয় মতামত শুনে পদ্ধতি বদলানো, গুরুত্ব অনুযায়ী পদক্ষেপ করা এবং তার উপর ভিত্তি করে আইন প্রণয়ন করা যা জনগণের স্বার্থে কল্যাণমুখী এবং বিবেচ্য হয়ে দাঁড়াবে। একমাত্র আইন প্রণয়ন নয়, প্রতিটি পরিস্থিতি সমানভাবে বোঝাপড়া এবং যথোপযুক্ত পদ্ধতির অনুসরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য কেন সুস্পষ্ট তার প্রধান 3টি কারণ নিচে বর্ণনা করা হল। পড়ে দেখুন:
- পরিস্থিতি বোঝার সমস্যা:
সাইবার সিকিউরিটি স্পেস বছরের পর বছর ধরে প্রচুর সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করে আসছে। এটি একটি নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কাজ, যা সুদক্ষ প্রতিভাবান আবেদনকারীর মধ্যে এধরণের আগ্রহ রয়েছে তাঁদের খোঁজ করে চলেছে ইন্ডাস্ট্রি। সাইবার সিকিউরিটির কাজগুলির ধরণ হল প্রযুক্তিগত, যা অপরিবর্তনশীল।
একটি চেনা ছবি, কম্পিউটারে ঘেরা একটি ঘরে ক্লান্ত চেহারায় একজন পুরুষ বসে তা সামলাচ্ছেন। আর এভাবে কম্পিউটারের মাঝে বসে থাকা কাজটি একজন মহিলার পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর। সাইবার নিরাপত্তার কাজটি পুরুষদের অত্যন্ত পছন্দসই কাজের তালিকার মধ্যে পড়ে।

- লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত:
বেশিরভাগ পেশার ক্ষেত্রে সচেতনে বা অসচেতনভাবে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত করা হয়ে থাকে। সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমী নয়। এক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য করা হয়ে থাকে। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে, 51% উত্তরদাতারা কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন এবং 87% উত্তরদাতার মনে হয়েছে এধরণের পক্ষপাত নিতান্তই অসচেতনভাবে নেওয়া হয়েছে।
কম সংখ্যক মহিলা কর্মীদের ক্ষেত্রে বেতনের ব্যবধানে লিঙ্গ বৈষম্য একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
একটি আমেরিকান সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিগত বছরের বেতন সম্পর্কে মহিলাদের প্রশ্ন করা হলে উত্তর আসে মার্কিন মহিলারা 50 হাজার থেকে 99 হাজার 999 ডলার উপার্জন করে ছিলেন। যা পুরুষদের তুলনায় 12% কম(29%)।
বিরামহীন পদ্ধতিতে চলতে থাকায় বৈষম্যের দিকে নিয়ে যায় যা সচেতন বা অসচেতনভাবে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত সৃষ্টি হয়। আর এর প্রভাব পড়ে বেতনের ব্যবধানেও।
- অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার অভাব:
অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পেশা হল সাইবার সিকিউরিটি স্পেসের আধিকারিক, আর এই পেশা নিয়ে তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা STEM বিভাগে, কিন্তু অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আবেদন করলেও পিছিয়ে থাকতে পারেন। নির্দিষ্ট কলেজে পড়ে এবং এই কাজের পদ্ধতি নিয়ে বিশদে জানা থাকলে আবেদন করে সহজেই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে।
মহিলা আবেদনকারীদের এই কাজের বিষয়ে সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অবগত করা প্রয়োজন, এছাড়া তাঁদের আগ্রহ থাকলে এই পেশায় নিযুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহ, প্রশিক্ষণ এবং সমর্থন করা উচিত।
কী করণীয়?
ছোট ছোট বদলের মধ্যে দিয়ে আমরা বড় পরিবর্তন আনতে পারি। সর্বপ্রথম, আগ্রহী মহিলাদের কম্পিউটার সায়েন্স নিতে হবে এবং এর পাশাপাশি ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য উৎসাহ দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে শিক্ষাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ, যেসব মহিলা সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত তাদের মাধ্যমে ওয়ার্কশপ করানো। শক্তিশালী রোল মডেল গড়ে তোলা প্রয়োজন। মহিলাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরা প্রয়োজন।

এবিষয়ে পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা সরকার আয়োজন করতে পারে। যাঁরা পরামর্শ দেবেন তাঁদের একটাই সহজ উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, নিরাপদ জায়গায় কথোপকথন এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে আগ্রহী মহিলাদের উৎসাহ দেওয়া।
সাইবার নিরাপত্তায় নারীদের স্বাভাবিকীকরণ হওয়াটা খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে পেশাদার মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে গিয়ে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহিলাদেরকে নিরাপদ এবং পুরুষের সমান কাজের জায়গা তৈরি করে দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
সাইবার সিকিউরিটি স্পেসে মহিলাকর্মীদের সংখ্যা বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে। তবুও আমাদের মনে রাখা জরুরী, পুরুষ-নারীর মধ্যে ব্যবধান যথেষ্ট রয়েছে। আর তা নিয়ে নানা জটিলতাও রয়েছে।
লিঙ্গ বৈষম্যের সমস্যাটি যদি আমরা খুব কাছ থেকে দেখি, তাহলে এধরনের সামাজিক ব্যাধি দূর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যে বিষয়গুলি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিষয়গুলি অত্যন্ত সহজে পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতেই পারে। পদক্ষেপগুলির সমর্থনে সাইবার নিরাপত্তা ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ লাভ সম্ভব।
যদি স্কুল থেকে শক্তিশালী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমর্থনের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে চলি তাহলে সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নারীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। সমাজের এই লিঙ্গ বৈষম্য ব্যাধির নিরাময় করার ক্ষমতা রয়েছে সমাজের কাছেই। পক্ষপাতের মাধ্যমে নারীকে সঠিক রাস্তায় চালনা করাই আমাদের গুরু দায়িত্ব।
Write, Record and Answer! Consume Unlimited Content! All you need to do is sign in and its absolutely free!
Continue with one click!!By signing up, you agree to our Terms and Conditions and Privacy Policy.


