খাস কলকাতার বুকে দিওয়ালি শপিং- এর জন্য সেরা ৫টি দুর্দান্ত ঠিকানা!
9 minuteRead
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই বাঙালির আরেক উৎসব চলে আসে- দীপাবলি বা দিওয়ালি।
শ্যামাপূজা বা দীপাবলি হল আলোর উৎসব। তাই ঝলমলে আলো, আতশবাজির রোশনাই, থরে থরে সাজানো মিষ্টি, চারপাশে উজ্জ্বল হাসিখুশি মুখ - দিওয়ালির কলকাতা সেজে ওঠে সম্পূর্ণ অন্য রূপে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলির ঠিক পরদিন আসে দিওয়ালি। আমরা যেমন মা কালির পুজো করি, ভারতের বাকি অংশে এই দিওয়ালিতে পুজো হয় মা লক্ষ্মী ও গণেশের। সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকার জন্য তাঁরা এই পুজো করেন। আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও পুরুষানুক্রমে বসবাস করছেন বহু অবাঙালি পরিবার যাঁরা এখন এই রাজ্যেরই বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন। তাঁদের সাথে সাথে তাই আমাদের মনও দিওয়ালির 'রঙ্গোলি'র মত রঙীন হয়ে ওঠে। আমাদের ঘরেও আলপনার পাশে সযত্নে আঁকা হয় আবীরের রঙ্গোলি। আর দীপাবলির প্রদীপ নেভার ঠিক আগে বাংলাতেও জ্বলে ওঠে দিওয়ালির দিয়া..
উৎসবের ছোঁয়া লাগবে আর উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা জিনিসপত্র কিনতে বেরোবেন না তা কি সম্ভব? ব্যস, দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাসের মধ্যেই দোকানে দোকানে আবার ভিড় বাড়তে থাকে। কলকাতা মানেই যে শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রকারের খাবার পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়! এই আনন্দের শহরে রয়েছে শপিং প্রিয় মানুষদের জন্য দারুণ দারুণ কিছু শপিং ডেস্টিনেশন।
নীচে পরপর রইলো এরকমই কয়েকটি দিওয়ালি স্পেশাল উল্লেখযোগ্য শপিং স্পট যেগুলি একদমই মিস করা যাবে না..
Image Source: tripoto
নিউ মার্কেট
নামে 'নিউ' থাকলেও আসলে এটি কলকাতার সবথেকে পুরনো মার্কেটগুলির মধ্যে একটি। আগে এর নাম ছিল হগ মার্কেট। কথায় আছে নিউ মার্কেটে নাকি বাঘের দুধ খুঁজলেও তা পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা সেসব খুঁজতে এখানে আসিনি। আর আমরা যা খুঁজতে এসেছি তা এই মার্কেটে ঢুকলেই চোখের সামনে থরে থরে সাজানো রয়েছে! এখানে প্রায় ২০০০ এর বেশি স্টল আছে। তাতে জামাকাপড়, গয়না, জুতো, একসেসারিজ থেকে ঘর সাজানোর উপকরণ সব পাবেন, শুধু দরাদরিতে সিদ্ধহস্ত হতে হবে আপনাকে। নিউমার্কেটে সবথেকে বেশি ভিড় হয় সন্ধ্যেবেলা। তবে ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে পছন্দের অক্সিডাইজড ঝুমকো কিনতে বেশ ভালোলাগে।
কোথায় অবস্থিত: লিন্ডসে স্ট্রিট
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৮টা (সোমবার-শুক্রবার), শনিবার দুপুর ২.৩০টে পর্যন্ত খোলা থাকে, রবিবার বন্ধ।
সবথেকে কাছের মেট্রোস্টেশন: এসপ্ল্যানেড
গড়িয়াহাট বাজার
এমব্রয়ডেড লেহঙ্গা থেকে কোরিয়ান ফ্যাশনের টপ, জড়োয়ার গয়না থেকে টিবেটিয়ান বিডসের গয়না, রাজস্থানী মিনেকারী কাজ করা পার্স থেকে আধুনিক স্লিংব্যাগ - এইবারের দিওয়ালিতে আপনি যে লুকেই নিজেকে সাজাতে চান তার সবকিছু ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি সহযোগে পাওয়া যাবে এই গড়িয়াহাট বাজারে। ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক থেকে বিজন সেতু পর্যন্ত এবং বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে গোলপার্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে বসে এই বাজার। নামী দামী ব্র্যান্ডের আউটলেটও যেমন এখানে পাবেন তেমনই স্থানীয় মানুষরা রাস্তায় বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন। তবে দর কষাকষিতে আপনাকে লেটার মার্ক্স রাখতে হবে নাহলে এই বাজারে পকেট সামাল দেওয়া মুশকিল! আর একটা কথা দিওয়ালি মানে তো মেহেন্দি ভরা হাত হতেই হবে, এই অঞ্চলে পরপর লাইন দিয়ে মেহেন্দি পরিয়ে দেওয়ার লোক বসে থাকে! বাজার শেষে মেহেন্দিটাও হয়ে যাবে তাই গড়িয়াহাটেই।কোথায় অবস্থিত: বালিগঞ্জ
সময়: সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যে ৮টা পর্যন্ত
সবথেকে কাছের মেট্রোস্টেশন: কালিঘাট
Image Source: okcredit
বড়বাজার
এই বাজার পুরো ভারতের বড় বাজারগুলির মধ্যে একটি। বড়বাজার তার টেক্সটাইলের জন্য বিখ্যাত হলেও বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম হোলসেল বাজার।
প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই বাজারে পাবেন দিওয়ালির জন্য বিভিন্ন রঙের ও ডিজাইনের প্রদীপ, প্রচুর পরিমাণে চরকি, তুবড়ি, রঙমশাল, ফুলঝুরি, আতশবাজি কিনতে পারেন ভীষণ সস্তা দামে (একটা কথা প্লিজ মনে রাখবেন, শব্দদূষণে আপনার কোনও ভূমিকা না থাকাই ভালো)! তাছাড়া ঠাকুরের মূর্তীর দোকানও আছে অসংখ্য এই বড়বাজারে। আপনি চাইলে লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি কিনতে পারেন স্বচ্ছন্দে।
কোথায় অবস্থিত: বড়বাজার
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা (শুধুমাত্র রবিবার বন্ধ থাকে)
সবথেকে কাছের মেট্রোস্টেশন: মহাত্মা গান্ধী রোড
Image Source: traveltriangle
হাতিবাগান
শোনা যায় এককালে হাতি বাঁধা থাকত এই অঞ্চলে তার থেকে এর নাম হয় হাতিবাগান। বর্তমানে স্ট্রিট শপিং এর আরেক নাম হাতিবাগান। আধুনিক এবং ট্রেন্ডি ড্রেস, একসেসারিজ, জুয়েলারি কি নেই হাতিবাগানে! উত্তর কলকাতার প্রান হল এই অঞ্চল। এখানকার সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হল বাজারটি ভীষণরকম পকেট ফ্রেন্ডলি! সারা দুপুর ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার মজাই অন্যরকম হাতিবাগানে তারপর ঐতিহ্যময় স্টার থিয়েটারে নিজের পছন্দের কোনও মুভি বা নাটকের শো দেখে বাড়ি ফিরতে পারেন।
কোথায় অবস্থিত: শ্যামবাজার
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৮.৩০টা অব্দি খোলা থাকে।
সবথেকে কাছের মেট্রো স্টেশন: শ্যামবাজার
দক্ষিণাপণ
দক্ষিণ কলকাতা ঘোরা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি আপনি দক্ষিণাপণে একবার ঘুরে না আসেন! ঢাকুরিয়া উড়ালপুরের ডানদিকে গড়িয়াহাট রোডের ঠিক ওপরে রয়েছে এই শপিং মল যা কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট দ্বারা নির্মিত। এখানকার সবথেকে বিখ্যাত উপকরণ হল হস্তশিল্প সামগ্রী৷ তাছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শাড়ি থেকে শুরু করে গয়না, ব্যাগ, ঘর সাজানোর সামগ্রী সব পাবেন এখানে। দিওয়ালিতে ঘর সাজিয়ে তুলতে চাইবে সবাই। আপনার রুচিসম্মত সমস্তরকম সামগ্রী আপনি পেয়ে যাবেন দক্ষিণাপণে তার গ্যারান্টি আমরা দিলাম।
কোথায় অবস্থিত: ঢাকুরিয়া
সময়: সোমবার দুপুর দুটোয় এই শপিং মল খোলে, মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যে ৭.৩০টা অব্দি খোলা থাকে এবং রবিবার পুরো বন্ধ।
সবথেকে কাছের মেট্রো স্টেশন: রবীন্দ্র সদন মেট্রো
বোনাসে থাকলো আর একটা অন্যরকম শপিং করার জায়গার নাম যা কলকাতার গর্বও বটে!
কলেজ স্ট্রিট
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের মার্কেট এবং ভারতের সর্ববৃহৎ বইয়ের বাজার হল কলকাতার কলেজ স্ট্রিট। দিওয়ালিতে প্রিয় মানুষকে উপহার দেওয়ার রীতি আছে, তাছাড়া তার এক-দু'দিন পরেই আসছে ভাইফোঁটা। আর উপহার হিসেবে বইয়ের থেকে সুন্দর কিছু হতে পারে কি? তাই বাকি কেনাকাটার ফাঁকে একবার টুক করে ঘুরে আসতেই পারেন বাঙালির বইপাড়ায়।
কোথায় অবস্থিত: প্রেসিডেন্সি কলেজ, জনপ্রিয় কফি হাউস এলাকায়
সময়: শনিবার অর্ধেক দিন ও রবিবার সারাদিন বন্ধ থাকে।
সবথেকে কাছের মেট্রো স্টেশন: মহাত্মা গান্ধী রোড
যারা ভাবছেন এখনও শপিং করবেন কিনা তারা আর না ভেবে বরং বেড়িয়েই পড়ুন। প্রয়োজন না থাক অপ্রয়োজনীয় ভাবেই কোনও বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে অনেকগুলো মাটির প্রদীপ কিনলেন না হয়! এই দিওয়ালিতে আপনার ঘরের সাথে সাথে তাঁর জীবনও আর একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠুক। পরিবার এবং প্রিয়জনদের পাশে নিয়ে সুরক্ষিত দিওয়ালি কাটান আপনারা সবাই। আর অবশ্যই যেন এই দিওয়ালি আমাদের সবার কাছে কোনও শব্দের উদযাপন নয়, এক আলোর উৎসব হয়ে ওঠে..
Write, Record and Answer! Consume Unlimited Content! All you need to do is sign in and its absolutely free!
Continue with one click!!By signing up, you agree to our Terms and Conditions and Privacy Policy.


