মহিলা সাহিত্যিকের লেখা দুটি জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস যা অবশ্যই পড়বেন

6 minute
Read



Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

"এতো আলো পৃথিবীতে, তবু পৃথিবীর মানুষগুলো এতো অন্ধকারে কেন?"

ধারালো, দৃপ্ত কন্ঠে এই প্রশ্ন যিনি করেছিলেন তার নাম সত্যবতী। আর সত্যবতীর মুখে এই প্রশ্ন যিনি বসিয়েছিলেন তাঁর নাম আশাপূর্ণা দেবী। সমাজের সাধারণ প্রশ্নদের অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের মনকে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিতে পারতেন তিনি। এটাই ছিল তাঁর শক্তি।

আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম ১৯০৯ সালের ৮ই জানুয়ারি, উত্তর কলকাতার পটলডাঙ্গায়। ছোটবেলা থেকেই রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি যেখানে মেয়েদের পড়াশোনা করা ছিল অপরাধ। তার মধ্যেও তিনি এবং তাঁর বোন অল্প অল্প বই পড়তেন লুকিয়ে। তারপর মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় আশাপূর্ণা দেবীর। ওনার প্রথম লেখা ছিল শিশুসাথী পত্রিকায় "বাইরের ডাক" বলে একটি কবিতা৷ তারপর আবার কলম ধরলেন বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর। বহু উপন্যাস, ছোটগল্প লিখেছেন তিনি কিন্তু যে তিনটি উপন্যাস তাঁকে বাংলা সাহিত্যে আজীবন অমর করে রাখবে তাদের নাম হল - প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা এবং বকুলকথা।

এই ট্রিলজি একই পরিবারের তিনটি প্রজন্মের নারীর ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এর মধ্যে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি'র কথা বিশেষভাবে বলতে চাই কারন এটি তাঁর এই ট্রিলজির প্রথম বই। অনেকের পছন্দ দ্বিতীয় বইটি অর্থাৎ 'সুবর্ণলতা'। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' কে একটু এগিয়ে রাখব। এই লেখাটা ঠিক বুক রিভিউ নয় তবে উপন্যাসটি পড়ে আমার কেমন লেগেছে সে কথাই জানাব আপনাদের।

প্রথম প্রতিশ্রুতি-র মূল চরিত্র সত্যবতী যার ন'বছর বয়সে গৌরীদান হয়ে গেছিল। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সে বাপের বাড়িতেই থাকত। সত্যবতীর বাবা ছিলেন বিখ্যাত কবিরাজ এবং এক আদর্শবান মানুষ আর সত্যবতী ছিল তাঁর চোখের মণি। বাবার প্রশ্রয়ে সত্য সেই যুগে পড়াশোনা শুরু করে, সঠিক যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করতে ভয় পায় না, সত্যি কথা বলে সবসময়। এক সময় সে শ্বশুরবাড়ি যায়। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারে দুনিয়াটা এত সহজ, সাদাসিধে নয়। সেখানে সর্বদা সত্যি বলা যায় না, বললে তাকেই দোষী বলে সবাই। শুরু হয় সত্যবতীর লড়াই। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগের এক গ্রাম্য নারী তাঁর মনের জোরে অসাধ্য সাধন করে। কিভাবে? সেটা জানতে হলে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' অবশ্যই পড়ুন। বাংলা সাহিত্যের সেরা দশটি উপন্যাসের মধ্যে এটি স্থান পায়।


আশাপূর্ণা দেবী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তাঁর চারপাশের মানুষকে দেখেই। এ কথা তিনি নিজেই বলেছেন বহুবার। অন্দরমহলের গল্পদের বের করে এনেছেন বাইরের জগতে৷ পুরুষশাসিত সমাজ প্রথমে নাক কুঁচকেছেন এতে ঠিকই কিন্তু সাধারণ মানুষ আদর করে টেনে নিয়েছেন সত্যবতীকে, কেঁদেছেন সুবর্ণলতার কষ্টে। এখানেই লেখকের সবথেকে বড় পাওনা।

আশাপূর্ণা দেবী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার লাভ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও তাঁকে রবীন্দ্র পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। আমদের বাংলা সাহিত্যের সরস্বতীকে প্রনাম জানাই। আর এখনও 'প্রথম প্রতিশ্রুতি' না পড়া থাকলে চোখ বন্ধ করে কিনে ফেলুন তারপর পড়া হয়ে গেলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না বইটি পড়ে আপনার কেমন লাগল!

আর একজন মহিলা সাহিত্যিকের কথা জানাবো আপনাদের। তিনি বর্তমান বাংলা সাহিত্যের এক বলিষ্ঠ লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার। বিশেষভাবে তাঁর নাম উল্লেখ করার কারন হল তিলোত্তমা সোশ্যাল মিডিয়াতে একদমই বেশি থাকেন না। তাই তাঁর কথা আমাদের সবার নিউজফিডে খুব একটা পাওয়া যাবে না৷ এদিকে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এখন ওনার থেকে সেরা লেখিকা হয়ত আর কেউ নেই। ওনার প্রচুর উপন্যাস রয়েছে তার মধ্যে একটির নাম আমি করব, 'অর্জুন ও চার কন্যা'

মহাভারতের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসটিতে রয়েছে অর্জুনকে ঘিরে যে কয়েকজন নারী এসছেন তাদের কথা, তাদের মন, অনেক জানা ও অজানা তথ্য উঠে এসছে এই উপন্যাসটিতে। এমনিতে মহাভারত মানে পুরুষদের জয় জয়কার। বিশেষত অর্জুন তো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সেই অর্জুনের জীবনের না জানা কাহিনীগুলো মহাভারতের গল্পকে নিয়ন্ত্রণ করেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। বাকি পুরোটা পড়তে, মহাভারতের চেনা চরিত্রদের অন্যভাবে দেখতে চাইলে অবশ্যই পড়ুন 'অর্জুন ও চার কন্যা'। লেখিকার লেখার স্টাইলে প্রতিটি চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নারীস্বাধীনতার কথা বারবার উঠে এসছে এ উপন্যাসে।

'অর্জুন ও চার কন্যা' পড়ে কেমন লাগল সেটা জানাবেন। প্রথম বইটির নাম শুনে থাকলেও এই বইটি একটু আনকমন। তবে ভরসা করে দেখতে পারেন, পড়ার পরে মন খুশি হয়ে যাবে..

Logged in user's profile picture