মহিলাদের পাঁচটি বিশেষ অধিকার যা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন
7 minuteRead
আমাদের দেশে দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, বা নারীদিবস পালন করার পাশাপাশি কন্যাভ্রুণ হত্যা থেকে শুরু করে বধূনির্যাতন এসবও সমান তালেই চলে আসছে বহুকাল ধরে। অষ্টমীর দিন যেমন পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র মুখস্ত থাকে অনেকের, তেমনভাবেই মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা কয়েকটি অধিকার এবং আইন মুখস্ত করে রাখা উচিত আমাদের প্রত্যেকের। এমনকি পুরুষদেরও সমানভাবে মাথায় রাখা প্রয়োজন এই মহিলা অধিকারগুলি। কারন তারাও তো কারুর বাবা, ভাই, সন্তান বা বন্ধু তাই না?
তাই চলুন দেখি ফেলি চটপট পাঁচটি নারী সুরক্ষা আইন যা আমাদের অবশ্যই জানা উচিত-
গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার

যে কোনও রকমের গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে এখন প্রতিবাদ করতে পারেন মহিলারা। তা শুধুমাত্র শারিরীক অত্যাচারই হতে হবে তার কোনও মানে নেই। মানসিক, আর্থিক, মৌখিক বা যৌন অত্যাচার এই সব রকম নির্যাতনের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন যে কোনও নারী। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সেকশন ৪৯৮ ধারায় স্ত্রী, মা, বোন, পরিবারের অন্য মহিলা এমনকি মহিলা লিভ-ইন সঙ্গীও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন স্বামী, লিভ-ইন সঙ্গী অথবা অন্য আত্মীয়দের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন অযোগ্য ধারায় তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস হয়। তার সাথে তাকে প্রচুর টাকা জরিমানাও দিতে হয়। তাই বাড়ির বউ তাই যা হচ্ছে সব মুখ বুজে মেনে নিতে হবে- এসব এখন অতীত।
কর্মস্থলে হ্যারাসমেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার
কাজের অছিলায় বা প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে কর্মক্ষেত্রে যদি কেউ কোনও মহিলাকে শারিরীক নিগ্রহ করে তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে অভিযোগ দায়ের করা যায়। তাই কখনো এরকম কিছু হলে ভয়ে বা লজ্জায় মুখ বুজে থাকবেন না। চুপচাপ কাছের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ জানান। মনে রাখবেন এটি আপনার অধিকার..
মহিলাদের ZERO FIR করার অধিকার

ভারতের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও পুলিশ স্টেশনে আপনি এফআইআর জমা দিতে পারেন। অনেকে ভাবেন যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে তার নিকটবর্তী থানায় এফআইআর দায়ের করতে হয়। বর্তমানে তা করতে হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষত কোনও মহিলার যাতে সময় নষ্ট না হয় আর অভিযুক্তকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধরা যায় তার জন্য সুপ্রিম কোর্ট এই জিরো এফআইআর নিয়মটি পাশ করিয়েছে। যে থানায় এফআইআর জমা দিলেন কেস শুরু হওয়ার সময় তারা মূল এলাকার থানায় সেটি পাঠিয়ে দেন। আমরা অনেকেই কিন্তু এ বিষয়টি জানিনা। তাই পিছিয়েও যাই সময় লাগবে বলে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হিউম্যান রাইট এটি।
বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের সমানাধিকার

কর্মক্ষেত্রে একই পদে একই কাজ যদি পুরুষ এবং মহিলা একসাথে করেন তাহলে পারিশ্রমিকও তারা একই পরিমাণে পাবেন। এরকম কোনও নিয়ম নেই যে পুরুষ বলে তাঁদের বেতন মহিলাদের থেকে বেশি হবে একই পদে কাজ করেও। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি তা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। মানবাধিকারের 'সমান পারিশ্রমিক ধারা'র অধীনে রয়েছে এটি। ছোট-বড় বহু প্রতিষ্ঠানেই এই বৈষম্য চোখে পড়ে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন না অনেকে। অনেক সময় এই চুপ থাকাটাও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই মহিলারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন, বুঝে নিন নিজেদের জায়গা।
অজানা কেউ অনুসরণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া

বর্তমানে স্টক করা এক ভয়ঙ্কর দিকে এগোচ্ছে। পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে মেয়েরা এখন বাড়ি এবং রাজ্যের বাইরে যাচ্ছেন, সেখানে থাকছেন। অজানা জায়গায় তাদের অনেক অজানা বিপদেরও সামনে পড়তে হচ্ছে। তাদের মধ্যে এই অনুসরণ বা স্টকিং খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে আপনাদের বলছি এই নিয়ে একদম চিন্তা বা প্যানিক করবেন না। শুধু শারিরীকভাবে ক্ষতি করলেই তার শাস্তি হবে কিন্তু মানসিক ভাবে ডিসটার্ব করলে কেউ পার পেয়ে যাবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। মহিলা মানবাধিকার আইনে এখন অজানা কেউ অনুসরণ করলেও তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। IPC র ৩৪৫ডি ধারায় কোনও মহিলার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যদি কেউ তাঁকে কোনওভাবে উত্যক্ত করে তাহলে সেই মহিলা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
আর এটা শুধু সামনাসামনি নয়। সোশ্যাল মিডিয়া, ফোন বা যে কোনও রকম যান্ত্রিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্যক্ত করলেও প্রযোজ্য হবে।
নতুন বছরের উপহার হিসেবে আরো কয়েকটি মহিলাদের আইনি অধিকার শেয়ার করছি
- যে কোনও মহিলা রেপ ভিক্টিমের অধিকার রয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাবতীয় আইনি পরিষেবা বা সাহায্য গ্রহণ করার। লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি অ্যাক্টের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ল'ইয়্যার নিযুক্তও হবে বিনা পারিশ্রমিকেই।
- সূর্য ডোবার পর কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করা যায় না। পরের দিন সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। একমাত্র কোনও ব্যতিক্রমী কেস বা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি থাকলে তবে রাতে মহিলাদের গ্রেফতার করা যায়।
- একমাত্র মহিলারাই পারেন ই-মেইল বা পোস্টের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে। অভিযোগ পাওয়ার পর থানা থেকে SHO যান সেই মহিলার বাড়ি অভিযোগ রেকর্ড করতে। তবে এক্ষেত্রে অভিযোগকারিনী যে কোনও কারনে নিরুপায় হলেই একমাত্র এভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।

তাহলে বুঝলেন তো মহিলাদের জন্য আমাদের দেশে কিন্তু আইনি সুরক্ষা কবচ রয়েছে বেশ কিছু। প্রয়োজন শুধু সে বিষয়ে সঠিক আর পরিষ্কার ধারণার। তাহলে আপনি যেখানেই থাকুন, নিরাপদ থাকবেন। যা কাজই করুন আত্মবিশ্বাসের সাথে করবেন। সচেতন হতে হবে আমাদেরকেই, প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনও সমস্যার সামনে। মহিলা অধিকার মানবাধিকার আইনেরই অংশ। আমার এই লেখা পড়ে যদি হেল্পফুল মনে হয় তবে অবশ্যই আপনার জীবনের প্রিয় নারীদের সাথে আজই শেয়ার করুন।
নতুন বছর খুব খুব ভালো কাটুক। সুস্থ থাকুন সবাই।
Write, Record and Answer! Consume Unlimited Content! All you need to do is sign in and its absolutely free!
Continue with one click!!By signing up, you agree to our Terms and Conditions and Privacy Policy.


