PCOS আছে? যাবতীয় সমস্যা দূর হতে পারে কয়েকটি মাত্র যোগাসনেই

7 minute
Read



Disclaimer This post may contain affiliate links. If you use any of these links to buy something we could earn a commission. We are a reader supported website and we thank you for your patronage.

PCOS যার পুরো নাম পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বর্তমানে মেয়েদের মাথাব্যাথার কারনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সমীক্ষা বলছে গড়ে ৫ জনের মধ্যে ১জনের হয় এই রোগ। কী এই পিসিওএস? কী তার উপসর্গ? এর থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী? এই সব কিছু আজ জানাবো আমরা তোমাদের। পড়তে থাকো..

পিসিওস কী?

এটি আসলে একটি হরমোনজনিত রোগ। অ্যান্ড্রোজেন নামের একটি হরমোন বেশি মাত্রায় ক্ষরিত হয় যার ফলে এই রোগে আক্রান্ত মহিলাদের ডিম্বানুগুলি সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না। তাই ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে। 

পিসিওসের উপসর্গ:

প্রধান লক্ষণ হল অনিয়মিত পিরিয়ডস। তিন-চার মাস পিরিয়ডস না হতে পারে এই রোগে। তাছাড়া পুরুষালি কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন প্রচুর পরিমাণে ব্রণ ওঠা, শরীরে পুরুষদের মত লোম ওঠা অথবা চুল পাতলা হয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝরতে থাকা। তার সঙ্গে মেজাজ হারানো তো আছেই। 

এর থেকে কি নিস্তার নেই? নিশ্চয় আছে। দীর্ঘকালীন চিকিৎসা যেমন আছে তেমনই আরেকটি অভ্যাস নিয়মিত পালন করলে কয়েক বছর পর মুক্তি পেয়ে যাবেন এই রোগ থেকে। সেটি হল যোগব্যায়াম। হ্যাঁ একমাত্র নিয়মিত যোগাসন এবং শরীরচর্চার দ্বারা PCOS বা PCOD র মত রোগ পুরো সেরে গেছে এটি প্রমাণিত। 

তবে যে কোনও রকম যোগাসন নয় কিন্তু! কিছু নির্দিষ্ট আসন আছে এই রোগের সেগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে তবেই ফল পাবেন। সেই যোগাসনের নামগুলি জেনে নিন এক্ষুনি। 

সেতুবন্ধ সর্বাঙ্গাসন: 

  • মেঝেতে পিঠ সোজা করে শুয়ে পড়ুন। 
  • এরপর হাঁটু দুটো ভাঁজ করে নিন। 
  • মেঝেতে হাতদুটো সোজা করে ছড়িয়ে দিন। 
  • পায়ের পাতা এবং হাত দিয়ে খুব শক্ত করে মেঝেতে ভর দিয়ে রাখুন। 
  • এরপর ধীরে ধীরে শরীরের পশ্চাদ অংশ মেঝে থেকে উপরের দিকে তুলে ধরুন।

সূর্যপ্রণাম: 

  • প্রথমে হাত জোড় করে প্রণাম করার ভঙ্গিতে দাঁড়ান।
  • হাতের তালুতে তালুতে খুব জোরে চাপুন যাতে বুকের পেশি শক্ত হয়। তারপর এই চাপ বজায় রেখে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে হাত তুলে পেছনে বেঁকান। 
  • ওখান থেকে সামনে ঝুঁকে হাত পায়ের সামনে মাটিতে রেখে পদহস্তাসন করুন।
  • এই অবস্থায় হাঁটু ভেঙে বসে পড়ুন। 
  • ওই অবস্থায় ডান পা পেছনে সোজা করে দিন। 
  • এ বার হাঁটু থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকান। 
  • বাঁ পা পেছনে সোজা করে দিন। 
  • এ বার ডনের ভঙ্গিতে হাতের জোরে নামুন। 
  • ডন থেকে আস্তে আস্তে উঠুন। 
  • বাঁ পা পূর্বের ভঙ্গিমায় ভাঁজ করে সামনে নিয়ে আসুন। 
  • মাথা নামান। 
  • ডান পা ভাঁজ করে সামনে নিয়ে আসুন। 
  • নিতম্ব গোড়ালিতে লাগিয়ে বসুন। 
  • আবার নিতম্ব তুলে সোজা রেখে পদহস্তাসন করুন। 
  • এ বার হাত তুলে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে পেছনে বেঁকান। 
  • সেখান থেকে সোজা হয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করার ভঙ্গিতে ফিরে আসুন। এই হল এক বার। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে এড়ি  তিন বার থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে ছ’ বার অভ্যাস করুন।

ভুজঙ্গাসন:

  • প্রথমে উপুড় হয়ে দুপা জোড় করে সোজা রেখে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। 
  • মাথাটা বামে অথবা ডানে - যেদিকে ইচ্ছে কাত করে রাখুন। 
  • হাত দুটো শরীরের দুপাশে ও হাতের পাতা মাটিতে লেগে থাকবে। 
  • এবার হাত দুটো টেনে নিয়ে এসে দু-বাহু বরাবর উপুড় করে রাখুন। 
  • হাতের ওপর ভর করে মাথা ওপরে তুলুন। 
  • বুক মাটি থেকে ওপরে উঠবে। 
  • কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পা জোড় অবস্থায় সোজা থাকবে। নাভি মেঝেতে লেগে থাকবে। 
  • দম থাকবে স্বাভাবিক। 
  • এভাবে পূর্ণ ভঙ্গিমায় এসে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন। ৩ থেকে ৫ বার করতে পারেন। প্রয়োজনে শবাসনে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে করতে পারেন।

নৌকাসন:

  • চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। 
  • এবার শরীরের ভার কোমর বা নিতম্বের উপর রেখে শরীরটাকে সামনের দিকে বাঁকাতে থাকুন যেন কোমর থেকে একদিকে মাথা ঘাড় পিঠ এবং অন্যদিকে পা মাটি থেকে প্রায় ৪৫ডিগ্রী কোণাবস্থায় শূন্যে উঠে আসে। 
  • হাত দুটো মাটির সমান্তরালে সোজা সামনে হাঁটুর দিকে এমনভাবে টানটান ছড়িয়ে রাখুন যেন হাঁটুর দু’পাশে দু’হাতের তালু হাঁটুর দিকে মুখ করে থাকে। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। সাধ্যমতো বেশ কয়েক সেকেণ্ড এ অবস্থায় থাকুন।
  • তারপর হাত পা ঘাড় মাথা মেঝেতে নামিয়ে বিশ্রাম নিয়ে এভাবে ৩/৪ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

শলভাসন:

  • চিবুক মাটিতে লাগিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। 
  • দু’ হাত সোজা করে পেট ও ঊরুর নীচে পাশাপাশি এমন ভাবে রাখুন যেন হাতের তালু দু’টি মাটির ওপর পাতা থাকে। 
  • হাতের তালুর ওপর চাপ দিয়ে পা দু’টিকে জোড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে সোজা করে ওপরের দিকে যতটা সম্ভব তুলুন। 
  • পা দু’টি যেন হাঁটুর কাছে বেঁকে না যায়। 
  • দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে উপুড় হয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন। 
  • স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে তিন বার অভ্যাস করুন।

বালাসন:

 

  • নিজের পশ্চাৎ গোড়ালির উপর রাখুন আর আরাম করে বসুন।
  • মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে বসুন আর হাঁটু আর গোড়ালি ফাঁক করুন।
  • এবার আসতে করে সরে নিজের শরীর এগিয়ে নিন, সাথে মাথা মাটিতে স্পর্শ করুন।
  • আপনার বুক যেন আপনার ঊরু আর হাঁটু যেন স্পর্শ করে যখন আপনি এই ভঙ্গিতে থাকবেন।
  • এটা মাথায় রাখবেন আপনার পশ্চাৎ যেন আপনার গোড়ালির উপর থাকে , বা একটু ঠেলা দিন যতটা পারবেন
  • এই ভঙ্গি তে নিজের হাত প্রসারিত করুন।
  • আর সামনের দিকে এগিয়ে দিন হাতের তালু।
  • এটা আপনার মাংস পেশী কে খুব টানটান করে যখন আপনি ধীরে শ্বাস নেবেন।
  • কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন, আপনার শরীরকে টানটান করুন আর নিজেকে ছেড়ে দিন।

মনে রাখবেন, প্রতিটি আসনের পরে শবাসন কিন্তু মাস্ট। আর খুব ভরা পেটে এবং একদম খালি পেটে কোনও যোগাসনই করবেন না।

শরীরের সাথে সাথে PCOS এ মনেও খুব চাপ পড়ে। আর মনের শান্তির জন্য যোগাসনের কোনও বিকল্প নেই। তবে যোগব্যায়াম ছাড়া আরো কয়েকটি উপায় আছে। যেমন, হাঁটা, জগিং, ওয়েট ট্রেনিং ইত্যাদি। মন থেকে যা ইচ্ছে হয় সেটাই করবেন। শুধু মনে রাখবেন নিয়মিত শরীরচর্চাই হল এই যন্ত্রনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র সহজ উপায়।

Logged in user's profile picture